বশির আলমামুন : চট্টগ্রাম মহানগরীর রিয়াজউদ্দীন বাজার এলাকায় অভিনব পন্থায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌনে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার ও ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হল-মো. একরামুল আলম (৩৭), সাহেব হাসান মনা (২৪), মো. ইরফান ওরফে সাব্বির (২৪) ও রবিউল হোসেন ওরফে ইবু (২৩)। এদের মধ্যে একরামুলের বাড়ি পটিয়ার দেউরডেঙ্গায়, সাহেদের বাড়ি মিরসরাই, ইয়াছিনের বাড়ি সাতকানিয়া এবং রবিউলের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) শহরের দামপাড়ায় সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে, রবিবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রিয়াজ উদ্দিন বাজার রয়েল টাওয়ারের সামনে থেকে ব্যবসায়ী নুর মো. ইয়াছিন কবিরের দুই কর্মচারীকে মারধর করে নগদ ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে রাতেই ওই ব্যবসায়ী বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মারামারির নাটক সাজিয়ে সুকৌশলে ব্যবসায়ীর ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই করে ডাকাত চক্রের ৭-৮ জন সদস্য। নুর এন্টারপ্রাইজের নামক প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গেলে এলাপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলা হলে কোতোয়ালী থানা পুলিশের একাধিক টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুল আসামি একরামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, বাদী নুর এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল বিক্রয়ের ব্যবসা করেন। তার প্রতিষ্ঠানের এসআর মোরশেদ আলম (২২) ও সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া (৫৫) প্রায় সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং লেনদেনের সকল কার্যক্রম করে থাকে। সেই হিসেবে গত ৯ জুলাই দুপুরের দিকে দুজনেই একটি লাল রংয়ের পুরাতন ব্যাগে প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় নগরের কোতোয়ালী থানার জুবিলী রোডস্থ রয়েল টাওয়ারের সামনে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন আসামি তাদের দুইজনকে ধাক্কা দেয়। সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আসামিরা তাদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও ছুরিকাঘাত করে। এসময় তাদের কাছ থাকা ব্যাগভর্তি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।
এর পরে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ছিনতাই কাজে জড়িত আসামি সাহেদ হোসেন মনাকে শনাক্ত করে সোমবার (১০ জুলাই) দুপুর ৩টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রউফাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার সহযোগী আসামিদের নাম-ঠিকানা জানায়। পরে তার দেখানো মতে ছিনতাই করা টাকার মধ্যে ভাগে পাওয়া নগদ ৪০ হাজার টাকা বাসার স্টিলের ছোট আলমারির ভেতর থেকে জব্দ করা হয়। পররবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি মো. একরামুল আলমকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সদরঘাটের মাদারবাড়ি রাবেয়া ওয়ার্কশপের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, গ্রেপ্তার আসামি মনাসহ ৮/১০ জন মিলে ডাকাতি করে লুণ্ঠিত টাকা তার কাছে জমা দিয়েছে। তার মধ্যে কিছু টাকা মনাকে এবং আর কিছু টাকা ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদেরকে দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজের কাছে রেখে দেয়। পরে গ্রেপ্তার একরামুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোটেল প্যারামাউন্টের কক্ষ থেকে নগদ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই দুইজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকা থেকে আসামি মো. ইয়াছিন ও মো. ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারাও ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা সকলেই গ্রেপ্তার আসামি মো. একরামুল আলমের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে। একইসঙ্গে তারা জানায়, গ্রেপ্তার একরামুলের পরিকল্পনায় অপরাপর আসামিরা বাদির প্রতিষ্ঠানের টাকা কে আনা নেওয়া করে বেশ কয়েকদিন যাবৎ অনুসরণ করে। পরে ব্যাংকে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা জানতে পেরে মারামারির নাটক সাজিয়ে টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
Leave a Reply